কুরআনের বিভিন্ন সুরায় এ নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাহাজ্জুদ নামাজ নফল ইবাদাত গুলোর মধ্যে শ্রষ্ঠতম।
এই নামাজ ঘুম ত্যাগ করে গভীর রাতে পড়তে হয় তাই আল্লাহ তায়ালা এর প্রতিদানও বেশি দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় নবী( সা.) কে এই নামাজ পড়তে বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।
নবীজিকে সম্বোধন করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, রাএির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত।
হয়তো বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন (মাকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন)। '[ সূরা - ১৭ বনি ইসরাইল, আয়াতঃ৭৯ ]
সম্পূর্ণ বাংলা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
- তাকদিরে তাহরিমা 'আল্লাহ আকবর' বলে নিয়ত বাঁধা।
- অতঃপর ছানা পড়া।
- সূরা ফাতিহা পড়া।
- সূরা মিলানো তথা কেরাত পড়া। অতঃপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সেজদা আদায় করা।
- এভাবেই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করতে হবে।
এভাবেই দুই দুই রাকাআত করে ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত কি?
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত দুই ভাবে পড়া যায়।
যদি সঠিক ও সহিহ ভাবে আরবিতে পারেন তাহলে অবশ্যই আরবিতে পড়বেন।
যদি মনে করেন আরবিতে নিয়ত ভুল হতে পারে তাহলে অবশ্যই বাংলায় পড়বেন, শুধু শুধু গুনা হওয়ার থেকে বাংলায় বলাই ভালো।
নিয়তটি হলোঃ- আরবি উচ্চারণঃ নাইতুয়ান উছালিয়া লিল্লাহি তালা আরবার রাকাতি সালাতি তাহাজ্জত সুন্নতে রাসুলিল্লাহি তালা মুতাজিহান ইলা জিহাতি কাবাতিস শারিহাতি আল্লাহুয়াকবার।
বাংলায়ঃ আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কেবলার দিকে মুখ করিয়া তাহাজ্জুদের দু-রাকআত নফল নামাজের নিয়ত করিলাম। আল্লাহু আকবার।”
তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা
সূরা মুজাম্মিল, সূরা মুদ্দাচ্ছির, সূরা মুলক, সূরা ওয়াকিআহ, সূরা দুখান, সূরা আর রহমান, সূরা ইয়াছিন, সূরা হাশর ও সূরা কাহাফ এবং অন্যান্য সূরা তিলাওয়াত করা অত্যন্ত বরকতময় ও ফলদায়ক। তবে আপনি ছোট সূরাও পড়তে পারেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময় কখন?
এশার সালাতের পরে বা রাতের দুই- তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় শুরু হয়।
তবে অর্ধ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো।
শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম।
রাত ৩-৪ টার আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা সবচেয়ে সঠিক সময়। তাহাজ্জুদ নামাজ একা পড়াই উত্তম।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, ফরজ নামাজের পর সব নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ট হলো তাহাজ্জুদ নামাজ তথা রাতের নামাজ। '( মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)
তবে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলেই তাহাজ্জুদের সময় শেষ হয়ে যায়। ঔ সময় তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করলে হবে না।
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত?
তাহাজ্জুদ নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। সর্ব নিম্ন ২ রাকাআত আর সর্বচ্চ ১২ রাকাআত।
রাসুলুল্লাহ (সঃ) ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাই ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়াই ভালো। তবে ৮ রাকাতই পড়তে হবে এমন নয়।
সম্ভব হলে ১২ রাকাআত তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারেন। তবে ৮ রাকাআত আদায় করা উত্তম। যদি সম্ভব না হয় ৪ রাকাআত আদায় করবেন। যদি তাও সম্ভব না হয় তবে অন্তত ২ রাকাআত হলেও তাহাজ্জুদ আদায় করা ভালো।
শেষ কথা
পরিশেষে কিছু কথা বলি। প্রতি রাতে এ সময় আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার ফরিয়াদ শুনেন।
তাই নফল ইবাদত বিশেষ উদ্দেশ্য বা প্রয়োজন ছাড়া
গোপনে পড়াই ভালো। কারও ঘুমের ব্যাঘাত যেন না হয় এবং অন্যকে দেখানোর মন মানসিকতা যেন না থাকে। এ বিষয়ে যত্নশীল ও সতর্ক থাকতে হবে। তাহাজ্জুদ নিয়মিত আদায় করতে পারলে তা অতি উত্তম।
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ ভাবে রাতের শেষ প্রহরে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন।
এমনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সহিহ করে সময়মতো সঠিক ভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুক। আমিন...